আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম

8 07 2012

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।
গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলমান,
মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম।

হিন্দু বাড়িতে যাত্রা গান হইত,
নিমন্ত্রণ দিত আমরা যাইতাম।
জারি গান, বাউল গান
আনন্দের তুফান
গাইয়া সারি গান নৌকা দৌড়াইতাম।

বর্ষা যখন হইত,
গাজির গান আইত,
রংগে ঢংগে গাইত
আনন্দ পাইতাম।
কে হবে মেম্বার,
কে বা সরকার
আমরা কি তার খবরও লইতাম
হায়রে আমরা কি তার খবরও লইতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।

করি যে ভাবনা
সেই দিন আর পাব নাহ
ছিল বাসনা সুখি হইতাম।
দিন হইতে দিন
আসে যে কঠিন
করিম দীনহীন কোন পথে যাইতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।





অবোধ মন তোরে আর কি বলি

7 07 2012

অবোধ মন তোরে আর কি বলি।

পেয়ে ধন সে ধন সব হারালি।।

মহাজনের ধন এনে ছিটালি রে উলুবনে।

কি হবে নিকাশের দিনে সে ভাবনা কই ভাবলি।।

সই করিয়ে পুঁজি তখন আনলি রে তিন রতি এক মণ।

ব্যাপার করা যেমন তেমন আসলে খাদ মিশালি।।

করলি ভালো বেচাকেনা চিনলি না মন রাং কি সোনা।

লালন বলে মন রসনা কেন সাধুর হাটে এলি।।





আছে যার মনের মানুষ মনে তোলা

7 07 2012

আছে যার মনের মানুষ মনে তোলা সে কি জপে অন্য মালা।

অতি নির্জনে বসে দেখছে খেলা।।

কাছে রয় ডাকে তারে উচ্চস্বরে কোন পাগলা।

যে যা বোঝে সে তাই বুঝে থাক রে ভোলা।।

যার যেখানে ব্যথা নেহাত সেখানে করে ডলামলা।

তেমনি জেনো মনের মানুষ মনে তোলা।।

যে জনা দেখে সে রূপ করিয়ে চুপ রয় নিরালা।

লালন ভেড়োর লোক দেখানো মুখে হরি হরি বলা।।





চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি

7 07 2012

ভেদ-পরিচয় দেয় না আমায় ঐ খেদে ঝরে আঁখি।।

পাখি বুলি বলে শুনতে পাই রূপ কেমন দেখিনা ভাই

বিষম ঘোর দেখি।

চেনাল পেলে চিনে নিতাম যেতো মনের ধুকধুকি।।

পোষা পাখি চিনলাম না এ লজ্জা তো যাবে না উপায় কি করি!

কোন দিন জানি যাবে উড়ে ধুলো দিয়ে দুই চোখই।।

নয় দরজা খাঁচাতে যায় আসে পাখি কোন পথে

চোখে দিয়ে রে ভেল্কি।

সিরাজ সাঁই কয় বয় লালন বয় ফাঁদ পেতে ঐ সিঁদমুখী।।





বিনা পাকালে গড়িয়ে কাঁচি

7 07 2012

বিনা পাকালে গড়িয়ে কাঁচি করছো নাচানাচি

ভেবেছো কামার বেটারে ফাঁকিতে ফেলেছি।।

জানা যাবে এসব নাচন কাঁচিতে কাটবে না যখন কারে করবি দোষী।

বোঁচা অস্ত্র টেনে কেবল মরছো মিছামিছি।।

পাগলের গো-বধ আনন্দ

মন তোমার আজ সেহি ছন্দ দেখে ধন্দ আছি।

নিজ মরণ পাগলে বোঝে তাও তোমার নাই বুঝি।।

কেনরে মন এমন হলি যেথায় জন্ম সেথায় ম’লি

আপন ফাঁকে আপনি প’লি।

কারে করবি দোষী রে মন তাও তো মহাখুশি।

সিরাজ সাঁই কয় লালন রে তোর জ্ঞান হলো নৈরাশী।।





আল্লাহ বল মন রে পাখী

7 07 2012

আল্লাহ বল মন রে পাখী।

ভবে কেউ কার দুঃখের নয় রে দুখী।।

ভুলো না রে ভব ভ্রান্ত কাজে

আখেরে এসব কান্ড মিছে ,

মন রে আসতে একা যেতে একা

এ ভব পিরিতের ফল আছে কি।।

হওয়া বন্ধ হলে সুবাদ কিছুই নাই

বাড়ির বাহির করিবে সবাই,

মন তোর কেবা আপন পর কে তখন

দেখে শুনে খেদে ঝরে আঁখি।।

গোরের কিনারে যখন লয়ে যায়,

কাঁদিয়ে সবাই প্রাণ দিতে চায়

ফকির লালন বলে কারো গোরে কেউ যাবেনা,

থাকতে হয় একাকি।।





সাধ্য কিরে আমার সেরূপ চিনিতে

7 07 2012

সাধ্য কিরে আমার সেরূপ চিনিতে।

অহর্নিশি মায়ার ঠুসি জ্ঞানচক্ষেতে।।

ঈশানকোণে হামেশ ঘড়ি সে নড়ে কি আমি নড়ি।

আমার আমি হাতড়ে ফিরি না পাই ধরিতে।।

আমি আর সে অচিন একজন এক জায়গাতে থাকি দুজন।

ফাঁকে থাকি লক্ষ্য যোজন না পাই দেখিতে।।

ঢুঁড়ে হদ্দ মেনে আছি এখন বসে খেদাই মাছি।

লালন বলে মরে বাঁচি কোন কার্যেতে।।
সাধ্য কিরে আমার সেরূপ চিনিতে





জগৎ মুক্তিতে ভোলালেল সাঁই

7 07 2012

জগৎ মুক্তিতে ভোলালেল সাঁই।

ভক্তি দাও হে যাতে চরণ পাই।।

ভক্তিপদ বঞ্চিত করে মুক্তিপদ দিচ্ছো সবারে।

যাতে জীব ব্রহ্মাণ্ডে ঘোরে কান্ড তোমার দেখি তাই।।

রাঙ্গা চরণ দেখবো বলে বাঞ্ছা সদাই হৃৎকমলে।

তোমার নামের মিঠায় মন মজেছে রূপ কেমন তাই দেখতে চাই।।

চরণের যোগ্য মন নয় তথাপি মন ঐ চরণ চায়।

ফকির লালন বলে হে দয়াময় দয়া করো আজ আমায়।।





ধন্য আশেকিজনা এ দীন দুনিয়ায়

7 07 2012

ধন্য আশেকিজনা এ দীন দুনিয়ায়।

আশেক জোরা গগণের চাঁদ পাতালে নামায়।।

সুঁইছিদ্রে চালায় হাতি বিনা তেলে জ্বালায় বাতি।

কখন হয় নিষ্ঠারতি ঠাঁই অঠাঁই রয়।

কাম করে না নাম জপে না শুদ্ধ দেল আশেক দেওয়ানা।

তাইতে আমার সাঁই রব্বানা মদদ সদাই।।

আশেকের মাশুকি নামাজ তাইতে রাজি সাঁই বেনেয়াজ।

লালন করে শৃগালের কাজ দিয়ে সিংহের দায়।।





নিগূঢ় প্রেম কথাটি

7 07 2012

নিগূঢ় প্রেম কথাটি তাই আজ আমি শুধাই কার কাছে।

যে প্রেমেতে আল্লাহ নবি মেরাজ করেছে।।

মেরাজ সে ভাবের ভুবন গুপ্ত ব্যক্ত আলাপ হয়রে দুইজন।

কে পুরুষ আকার কি প্রকৃতি তার শাস্ত্রে প্রমাণ কি রেখেছে।।

কোন প্রেমের প্রেমিকা ফাতেমা করেন সাঁই কে পতি ভজনা।

কোন প্রেমের দায় ফাতেমা কে সাঁই মা বোল বলেছে।।

কোন প্রেমে গুরু হয় ভবতরী কোন প্রেমে শিষ্য হয় কাণ্ডারি।

না জেনে লালন প্রেমের উদ্দীপন পিরিত করে মিছে।।





সে রূপ দেখবি যদি নিরবধি সরল হয়ে থাক

7 07 2012

সে রূপ দেখবি যদি নিরবধি সরল হয়ে থাক

আয় না চলে ঘোমটা ফেলে নয়ন ভরে দেখ।।

সরল ভাবে যে তাকাবে অমনি সে রূপ দেখতে পাবে।

রূপেতে রূপ মিশে যাবে ঢাকনি দিয়ে ঢাক।।

চাতক পাখির এমনি ধারা অন্য বারি খায় না তারা

প্রান থাকিতে জ্যান্তে মরা

ঐ রূপ ডালে বসে ডাক।।

ডাকতে ডাকতে রাগ ধরিবে

হৃৎকমল বিকশিত হবে

লালন বলে সেই কমলে হবে মধুর চাক।।





আয় দেখে যা নতুন ভাব এনেছে গোরা

7 07 2012

আয় দেখে যা নতুন ভাব এনেছে গোরা।

মুড়িয়ে মাথা গলে কাঁথা কটিতে কৌপীন পরা।।

গোরা হাসে কাঁদে ভাবের অন্ত নাই

সদাই দীন দরদী বলে ছাড়ে হাঁই।

জিজ্ঞাসিলে কয় না কথা হয়েছে কি ধন হারা।।

গোরা শাল ছেড়ে কৌপীন পরেছে

আপনি মেতে জগত মাতিয়েছে।

হায় কী লীলে কলিকালে বেধবিধি চমৎকারা।।

সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলি হয়

গোরা তার মাঝে এক দিব্য যুগ দেখায়।

লালন বলে ভাবুক হলে সেই ভাব জানে তারা।।





বেদে কি তার মর্ম জানে

7 07 2012

বেদে কি তার মর্ম জানে।

যেরূপ সাইয়ের লীলাখেলা এই দেহভুবনে।।

পঞ্চতত্ত্ব বেদের বিচার পন্দিতেরা করে প্রচার

মানুষতত্ত্ব ভজনের সার বেদ ছাড়া বৈরাগ্যের সনে।।

গোলে হরি বললে কি হয় নিগূঢ়তত্ত্ব নিরালা পায়

নীরে ক্ষীরে যুগলে রয় সাঁইয়ের বারামখানা সেইখানে।।

পড়িলে কি পায় পদার্থ আত্মতত্ত্ব যার ভ্রান্ত।

লালন বলে সাধু মোহন্ত সিদ্ধ হয় আপনারে চিনে।।





আমি ঐ চরণে দাসের যোগ্য নই

7 07 2012

আমি ঐ চরণে দাসের যোগ্য নই।

নইলে মোর দশা কি এমন হয়।।

ভাব জানিনে প্রেম জানিনে দাসী হতে চাই চরণে।

ভাব দিয়ে ভাব নিলে মনে সেই সে রাঙ্গা চরণ পায়।।

নিজগুনে পদারবিন্দু দেন যদি সাঁই দীনবন্ধু

তবে তরি ভবসিন্ধু নইলে না দেখি উপায়।।

অহল্যা পাষানী ছিলো প্রভুর চরণ ধূলায় মানব হলো।

লালন পথে পড়ে রইলো যা করে সাঁই দয়াময়।।





কেন সময় বুঝে বাঁধাল বাঁধলে না

7 07 2012

কেন সময় বুঝে বাঁধাল বাঁধলে না

জল শুকাবে মীন পালাবে পস্তাবিরে ভাই মনা।।

ত্রিবেনীর তীর ধারে মীনরূপে সাঁই বিরাজ করে।

উপর উপর বেড়াও ঘুরে গভীরে কেন ডুবলেনা ।।

মাসান্তে মহাযোগ হয় নিরস হতে রস ভেসে যায়

করিয়ে সে যোগের নির্ণয় মীনরূপ খেলা দেখলে না।।

জগত জোড়া মীন অবতার মর্ম আছে সন্ধির উপর।

সিরাজ সাঁই কয় লালন তোমার সন্ধানীকে চিনলে না।।





গুরু বস্তু চিনে নে না

7 07 2012

গুরু বস্তু চিনে নে না।

অপারের কাণ্ডারি গুরু তা বিনে কেউ কুল পাবে না।।

হেলায় হেলায় দিন ফুরালো

মহাকালে ঘিরে এলো।

আর কতদিন বাঁচবে বলো রংমহলে পড়লে হানা।।

কি বলে এই ভবে এলি কি না কর্ম করে গেলি

মিছে মায়ায় ভুলে র’লি

সে কথা তোর মনে হয়না।।

এখনো চলতেছে পবন

হতে পারে কিছু সাধন

সিরাজ সাঁই কয় অবোধ লালন

এবার গেলে আর হবেনা…!





আমারে কি রাখবেন গুরু চরণদাসী

7 07 2012

আমারে কি রাখবেন গুরু চরণদাসী।

ইতরপনা কার্য আমার ঘটে অহর্নিশি।।

জঠর যন্ত্রণা পেয়ে

এসেছিলাম করার দিয়ে

সে সকল গিয়েছি ভুলে ভবে তে আসি।।

চিনলাম না সে গুরু কি ধন

জানলাম না তার সেবা সাধন

ঘুরতে বুঝি হল রে মন আবার চৌরাশি।।

গুরু যার থাকে সদয়

শমন বলে তার কিসের ভয়।

লালন বলে মন তুই আমায়

করলি দোষী।।





যাতে কৃষ্ণবরণ হলো গৌরবরণ

7 07 2012

জান গে সেই রাগের করণ

যাতে কৃষ্ণবরণ হলো গৌরবরণ।।

শতকোটি গোপীর সঙ্গে

কৃষ্ণপ্রেম রসরঙ্গে

সে যে টলের কার্য নয়

অটল না বলায় সে আর কেমন।।

রাধাতে যে ভাব কৃষ্ণের

জানে না তা গোপীগণে

সে ভাব না জেনে,

সে সঙ্গ কেমনে পাবে কোনজন।।

শম্ভুরসের উপাসনা

না জানিলে রসিক হয়না

লালন বলে সে যে নিগূঢ় করণ ব্রজে

অকৈতব ধন।।





সবে কি হবে ভবে ধর্মপরায়ণ

7 07 2012

সবে কি হবে ভবে ধর্মপরায়ণ।

যার যা ধর্ম সেই সে করে তোমার বলা অকারণ।।

কাঁটার মুখ কেউ চাঁছে না ময়ূর চিত্র কেউ না।

এমনি মতে সব ঘটনা যার যাতে আছে সৃজন।।

চিন্তামণি পদ্মিনী নারী এরাই পতিসেবার অধিকারী।

হস্তিনী শঙ্খিনী নারী তারা কর্কশ ভাষায় কয় বচন।।

শশক পুরুষ সত্যবাদী মৃগপুরুষ উর্ধ্ধভেদী।

অশ্ব বৃষ বেহুশ নিরবধি তাদের কুকর্মেতে সদাই মন।।

ধর্ম কর্ম আপনার মন করে ধর্ম সব মোমিনগণ।

লালন বলে ধর্মের করণ প্রাপ্তি হবে নিরঞ্জন।।





প্রেম করা কি কথার কথা

7 07 2012

প্রেম করা কি কথার কথা

প্রেমে মজে হরি নিলো গলায়ে কাঁথা।।

একদিন রাধে মান করিয়ে ছিলেন ধনী শ্যাম ত্যাজিয়ে।

মানের দায়ে শ্যাম যোগী হয়ে মুড়ালে মাথা।।

আর এক প্রেমে মজে ভোলা শ্মশানে মশানে খেলা।

গলে শুদ্ধ হাড়ের মালা পাগল অবস্থা।।

রূপ সনাতন উজির ছিলো প্রেমে মজে ফকির হলো।

লালন বলে এমনই জেনো প্রেমের ক্ষমতা।।