অন্তিম কালের কালে ও কি হয় না জানি

19 10 2012

অন্তিম কালের কালে ও কি হয় না জানি ।
কি মায়া ঘোরে কাটালাম হারে দিনমণি।।
এনেছিলাম, বসে খেলাম,
উপার্জন কই করিলাম,
বিকশের বেলা
খাটবে না ভেলা
এলো বানি।।
জেনে শুনে সোনা ফেলে
মন মজালাম রাঙ্ পিতলে,
এ লাজের কথা
বলিব কোথা
আর এখনি।।
ঠকে গেলাম কাজে কাজে,
ঘিরিল তনু পঞ্চাশে
লালন বলে মন
কি হবে এখন
বল্ রে শুনি।।





অনেক ভাগ্যের ফলে সে চাঁদ কেউদেখিতে পায়

19 10 2012

অনেক ভাগ্যের ফলে সে চাঁদ কেউ
দেখিতে পায়।
অমাবস্যে নাইরে চাঁদে দ্বি-দলে তার কিরণ
উদয়।।
বিন্দু মাঝে সিন্ধু-বারি
মাঝখানে তার স্বর্ণগিরি
অধর চাঁদের শূন্যপুরী
সেহি তো তিল-প্রমাণ জায়গায়।।
যেথা রে সে চন্দ্র ভুবন
দিবারাত্রির নাই অম্বেষণ
কোটি চন্দ্র জিনি কিরণ
বিজলি সঞ্চারে সদায়।।
দরশনে দুঃখ হরে
পরশনে পরশ করে
এমনি সে চান্দের মহিমে
লালন ডুবে ডোবে না তায়।।





অকুল পাড় দেখে মোদের লাগল রে ভয়

19 10 2012

অকুল পাড় দেখে মোদের লাগল রে ভয়।
মাঝি বেটা বড় ঠেঁটা, হাল ছেড়ে দিয়ে
বগল বাজায়।।
উজান ভাটি তিনটি নালে
দোম দমা দোম বেদম কলে
এক শব্দ হয়।
গুরুর গুরু পবন গুরু প্রেম আনন্দে
সাঁতার খেলায়।।
সামনেতে অপার নদী
পার হয়ে যায় ছয় জন বাদী
কিরূপ লীলাময়।
লালন বলে, ভাব জানিয়ে ডুব দিয়ে রত্ন
উঠায়।।





এমন সৌভাগ্য আমার কবে হবে

18 10 2012

এমন সৌভাগ্য আমার কবে হবে
দয়াল চাঁদ আসিয়ে আমায় পার করিবে।।
আমার সাধনের বল কিছু নাই
কেমনে সে পারে যাই
কূলে বসে দিচ্ছি দোহাই
অপার ভেবে।।
পতিতপাবন নামটি তার
তাই শুনে বল হয় আমার
আবার ভাবি এ পাপি আর
সে কি নিবে।।
গুরু পদে ভক্তিহীন
হয়ে রইলাম চিরদিন
লালন বলে কি করিতে
এলাম ভবে।।





ঘরের মানুষ আছে ঘরে

18 10 2012

ঘরের মানুষ আছে ঘরে
তারেও চিনলাম না—-
চিনে ভালবাসলে পরে
বিচারের ভয় রবে না,
তোমার মরনের ভয় রবে না।।
দুশছয়টি টুকরো কাঠে
বিনা পেরেক সেইঘর আঁটে
তিনশ ষাটটি তার লাগিয়ে
চালায় মালিক কারখানা।।
আট কুঠুরী ঘরের নয় দরজা
তিনজন উজির তিনজন রাজা
তিনতলা ঘর বড়ই মজার
পাঁচজনার ঐ বারামখানা।।
সাততলা ঘর সিংহাসনে
বসে আছে মালিক নিজের ধ্যানে
লালন বলে অন্যমনে
কর গুরুর সাধনা।।





আরবী ভাষায় বলে আল্লা

18 10 2012

আরবী ভাষায় বলে আল্লা
ফরাসীতে হয় খোদাতালা
গড্ বলছে যিশুর চ্যালা
ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভাবে।।
মনের ভাব প্রকাশিতে
ভাষার উদয় এ জগতে
মনাতীত অধরে চিনতে
ভাষাবাক্যে নাহি পারে।।
আল্লাহরি ভজন পূজন
সকলি মানুষের সৃজন
অনামক অচিনায় কখন
বাগীন্দ্রিয় না সম্ভবে।।
আপনাতে আপনি ফানা
হলে তারে যাবে জানা
সিরাজ সাঁই কয় লালন কানা
স্বরূপে রূপ দেখ সংক্ষেপে।।





সব লোকে কয় লালন কি জাত

18 10 2012

সব লোকে কয় লালন কি জাত এ সংসারে।
লালন বলে জাতের কি রূপ দেখলেম না এ
নজরে।।
কেউ মালা কেউ তসবী গলে
তাইত রে জাত ভিন্ন বলে
যাওয়া কিম্বা আসার বেলায়
জাতের চিহ্ন রয় কারে।।
ছুন্নত্ দিলে হয় মুসলমান
নারীর তবে কি হয় বিধান
বামন চিনি পৈতেয় প্রমাণ
বামনী চিনি কি প্রকারে।।
জগত্ বেড়ে জাতের কথা
লোকে গল্প করে যথা তথা
লালন বলে, জাতের ফাত্ না
ডুবিয়েছি সাধ বাজারে।।





অবোধ মন তোরে আর কি বলি

7 07 2012

অবোধ মন তোরে আর কি বলি।

পেয়ে ধন সে ধন সব হারালি।।

মহাজনের ধন এনে ছিটালি রে উলুবনে।

কি হবে নিকাশের দিনে সে ভাবনা কই ভাবলি।।

সই করিয়ে পুঁজি তখন আনলি রে তিন রতি এক মণ।

ব্যাপার করা যেমন তেমন আসলে খাদ মিশালি।।

করলি ভালো বেচাকেনা চিনলি না মন রাং কি সোনা।

লালন বলে মন রসনা কেন সাধুর হাটে এলি।।





আছে যার মনের মানুষ মনে তোলা

7 07 2012

আছে যার মনের মানুষ মনে তোলা সে কি জপে অন্য মালা।

অতি নির্জনে বসে দেখছে খেলা।।

কাছে রয় ডাকে তারে উচ্চস্বরে কোন পাগলা।

যে যা বোঝে সে তাই বুঝে থাক রে ভোলা।।

যার যেখানে ব্যথা নেহাত সেখানে করে ডলামলা।

তেমনি জেনো মনের মানুষ মনে তোলা।।

যে জনা দেখে সে রূপ করিয়ে চুপ রয় নিরালা।

লালন ভেড়োর লোক দেখানো মুখে হরি হরি বলা।।





চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি

7 07 2012

ভেদ-পরিচয় দেয় না আমায় ঐ খেদে ঝরে আঁখি।।

পাখি বুলি বলে শুনতে পাই রূপ কেমন দেখিনা ভাই

বিষম ঘোর দেখি।

চেনাল পেলে চিনে নিতাম যেতো মনের ধুকধুকি।।

পোষা পাখি চিনলাম না এ লজ্জা তো যাবে না উপায় কি করি!

কোন দিন জানি যাবে উড়ে ধুলো দিয়ে দুই চোখই।।

নয় দরজা খাঁচাতে যায় আসে পাখি কোন পথে

চোখে দিয়ে রে ভেল্কি।

সিরাজ সাঁই কয় বয় লালন বয় ফাঁদ পেতে ঐ সিঁদমুখী।।





বিনা পাকালে গড়িয়ে কাঁচি

7 07 2012

বিনা পাকালে গড়িয়ে কাঁচি করছো নাচানাচি

ভেবেছো কামার বেটারে ফাঁকিতে ফেলেছি।।

জানা যাবে এসব নাচন কাঁচিতে কাটবে না যখন কারে করবি দোষী।

বোঁচা অস্ত্র টেনে কেবল মরছো মিছামিছি।।

পাগলের গো-বধ আনন্দ

মন তোমার আজ সেহি ছন্দ দেখে ধন্দ আছি।

নিজ মরণ পাগলে বোঝে তাও তোমার নাই বুঝি।।

কেনরে মন এমন হলি যেথায় জন্ম সেথায় ম’লি

আপন ফাঁকে আপনি প’লি।

কারে করবি দোষী রে মন তাও তো মহাখুশি।

সিরাজ সাঁই কয় লালন রে তোর জ্ঞান হলো নৈরাশী।।





আল্লাহ বল মন রে পাখী

7 07 2012

আল্লাহ বল মন রে পাখী।

ভবে কেউ কার দুঃখের নয় রে দুখী।।

ভুলো না রে ভব ভ্রান্ত কাজে

আখেরে এসব কান্ড মিছে ,

মন রে আসতে একা যেতে একা

এ ভব পিরিতের ফল আছে কি।।

হওয়া বন্ধ হলে সুবাদ কিছুই নাই

বাড়ির বাহির করিবে সবাই,

মন তোর কেবা আপন পর কে তখন

দেখে শুনে খেদে ঝরে আঁখি।।

গোরের কিনারে যখন লয়ে যায়,

কাঁদিয়ে সবাই প্রাণ দিতে চায়

ফকির লালন বলে কারো গোরে কেউ যাবেনা,

থাকতে হয় একাকি।।





সাধ্য কিরে আমার সেরূপ চিনিতে

7 07 2012

সাধ্য কিরে আমার সেরূপ চিনিতে।

অহর্নিশি মায়ার ঠুসি জ্ঞানচক্ষেতে।।

ঈশানকোণে হামেশ ঘড়ি সে নড়ে কি আমি নড়ি।

আমার আমি হাতড়ে ফিরি না পাই ধরিতে।।

আমি আর সে অচিন একজন এক জায়গাতে থাকি দুজন।

ফাঁকে থাকি লক্ষ্য যোজন না পাই দেখিতে।।

ঢুঁড়ে হদ্দ মেনে আছি এখন বসে খেদাই মাছি।

লালন বলে মরে বাঁচি কোন কার্যেতে।।
সাধ্য কিরে আমার সেরূপ চিনিতে





জগৎ মুক্তিতে ভোলালেল সাঁই

7 07 2012

জগৎ মুক্তিতে ভোলালেল সাঁই।

ভক্তি দাও হে যাতে চরণ পাই।।

ভক্তিপদ বঞ্চিত করে মুক্তিপদ দিচ্ছো সবারে।

যাতে জীব ব্রহ্মাণ্ডে ঘোরে কান্ড তোমার দেখি তাই।।

রাঙ্গা চরণ দেখবো বলে বাঞ্ছা সদাই হৃৎকমলে।

তোমার নামের মিঠায় মন মজেছে রূপ কেমন তাই দেখতে চাই।।

চরণের যোগ্য মন নয় তথাপি মন ঐ চরণ চায়।

ফকির লালন বলে হে দয়াময় দয়া করো আজ আমায়।।





ধন্য আশেকিজনা এ দীন দুনিয়ায়

7 07 2012

ধন্য আশেকিজনা এ দীন দুনিয়ায়।

আশেক জোরা গগণের চাঁদ পাতালে নামায়।।

সুঁইছিদ্রে চালায় হাতি বিনা তেলে জ্বালায় বাতি।

কখন হয় নিষ্ঠারতি ঠাঁই অঠাঁই রয়।

কাম করে না নাম জপে না শুদ্ধ দেল আশেক দেওয়ানা।

তাইতে আমার সাঁই রব্বানা মদদ সদাই।।

আশেকের মাশুকি নামাজ তাইতে রাজি সাঁই বেনেয়াজ।

লালন করে শৃগালের কাজ দিয়ে সিংহের দায়।।





নিগূঢ় প্রেম কথাটি

7 07 2012

নিগূঢ় প্রেম কথাটি তাই আজ আমি শুধাই কার কাছে।

যে প্রেমেতে আল্লাহ নবি মেরাজ করেছে।।

মেরাজ সে ভাবের ভুবন গুপ্ত ব্যক্ত আলাপ হয়রে দুইজন।

কে পুরুষ আকার কি প্রকৃতি তার শাস্ত্রে প্রমাণ কি রেখেছে।।

কোন প্রেমের প্রেমিকা ফাতেমা করেন সাঁই কে পতি ভজনা।

কোন প্রেমের দায় ফাতেমা কে সাঁই মা বোল বলেছে।।

কোন প্রেমে গুরু হয় ভবতরী কোন প্রেমে শিষ্য হয় কাণ্ডারি।

না জেনে লালন প্রেমের উদ্দীপন পিরিত করে মিছে।।





সে রূপ দেখবি যদি নিরবধি সরল হয়ে থাক

7 07 2012

সে রূপ দেখবি যদি নিরবধি সরল হয়ে থাক

আয় না চলে ঘোমটা ফেলে নয়ন ভরে দেখ।।

সরল ভাবে যে তাকাবে অমনি সে রূপ দেখতে পাবে।

রূপেতে রূপ মিশে যাবে ঢাকনি দিয়ে ঢাক।।

চাতক পাখির এমনি ধারা অন্য বারি খায় না তারা

প্রান থাকিতে জ্যান্তে মরা

ঐ রূপ ডালে বসে ডাক।।

ডাকতে ডাকতে রাগ ধরিবে

হৃৎকমল বিকশিত হবে

লালন বলে সেই কমলে হবে মধুর চাক।।





আয় দেখে যা নতুন ভাব এনেছে গোরা

7 07 2012

আয় দেখে যা নতুন ভাব এনেছে গোরা।

মুড়িয়ে মাথা গলে কাঁথা কটিতে কৌপীন পরা।।

গোরা হাসে কাঁদে ভাবের অন্ত নাই

সদাই দীন দরদী বলে ছাড়ে হাঁই।

জিজ্ঞাসিলে কয় না কথা হয়েছে কি ধন হারা।।

গোরা শাল ছেড়ে কৌপীন পরেছে

আপনি মেতে জগত মাতিয়েছে।

হায় কী লীলে কলিকালে বেধবিধি চমৎকারা।।

সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলি হয়

গোরা তার মাঝে এক দিব্য যুগ দেখায়।

লালন বলে ভাবুক হলে সেই ভাব জানে তারা।।





বেদে কি তার মর্ম জানে

7 07 2012

বেদে কি তার মর্ম জানে।

যেরূপ সাইয়ের লীলাখেলা এই দেহভুবনে।।

পঞ্চতত্ত্ব বেদের বিচার পন্দিতেরা করে প্রচার

মানুষতত্ত্ব ভজনের সার বেদ ছাড়া বৈরাগ্যের সনে।।

গোলে হরি বললে কি হয় নিগূঢ়তত্ত্ব নিরালা পায়

নীরে ক্ষীরে যুগলে রয় সাঁইয়ের বারামখানা সেইখানে।।

পড়িলে কি পায় পদার্থ আত্মতত্ত্ব যার ভ্রান্ত।

লালন বলে সাধু মোহন্ত সিদ্ধ হয় আপনারে চিনে।।





আমি ঐ চরণে দাসের যোগ্য নই

7 07 2012

আমি ঐ চরণে দাসের যোগ্য নই।

নইলে মোর দশা কি এমন হয়।।

ভাব জানিনে প্রেম জানিনে দাসী হতে চাই চরণে।

ভাব দিয়ে ভাব নিলে মনে সেই সে রাঙ্গা চরণ পায়।।

নিজগুনে পদারবিন্দু দেন যদি সাঁই দীনবন্ধু

তবে তরি ভবসিন্ধু নইলে না দেখি উপায়।।

অহল্যা পাষানী ছিলো প্রভুর চরণ ধূলায় মানব হলো।

লালন পথে পড়ে রইলো যা করে সাঁই দয়াময়।।